মেঃকামরুল হুদা আকন্দ(বাবলু) সাময়িক বরখাস্ত হওয়ার দীর্ঘ দেড় বছর পর আদালতের রায় পেয়ে জনগণকে সঙ্গে করে আলোর মিছিল নিয়ে নির্বাচিত জনপ্রতিনিধির চেয়ারে বসলেন ময়মনসিংহের মুক্তাগাছা উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল হাই আকন্দ। সোমবার তিনি তার কর্মী-সমর্থকদের অংশ গ্রহনে ব্যানারে বড় করে লেখা ‘আলোর মিছিল’ শিরোনামে মিছিল নিয়ে উপজেলা পরিষদে গিয়ে নিজ চেয়ারে বসেন। এসময় তিনি কিছু নিয়মিত ফাইল সই করেন। বিষয়টি মুক্তাগাছার রাজনৈতিক অঙ্গনে ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি করেছে।
খোঁজ নিয়ে জানাযায়, বিগত নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে আনারস প্রতীক নিয়ে বিপুল ভোটে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন সাবেক পৌর মেয়র, আওয়ামীলীগ নেতা বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল হাই আকন্দ। নির্বাচনের পর থেকেই স্থানীয় রাজনীতিতে চলমান গ্রæপিংয়ের অংশ হিসেবে নেতাদের মাঝে প্রকাশ্য দ্ব›দ্ব প্রকট আকার ধারণ করে। পৌর নির্বাচন নিয়ে বিষয়টি আরও প্রকাশ্য রূপ ধারণ করে।
নানা ঘটনার পর তার বিরুদ্ধে উপজেলা প্রশাসনের কর্মকর্তাদের সাথে অসৎ আচরণের অভিযোগ এবং বিভিন্ন ইউপি চেয়ারম্যানদের পক্ষ থেকে অনাস্থার প্রেক্ষিতে ২০২১ সালের ১৩ এপ্রিল তাকে স্থানীয় সরকার বিভাগ উপজেলা চেয়ারম্যানের পদ থেকে সাময়িকভাবে বরখাস্ত করে প্রজ্ঞাপন জারি করে। উপজেলা পরিষদ আইন ১৯৯৬(সংশোধিত) আইন ২০১১ ধারা ১৬(খ) বলে সাময়িক বরখাস্ত করার পর আদেশের বিরুদ্ধে উপজেলা চেয়ারম্যান আব্দুল হাই আকন্দ তাকে চেয়ারম্যান পদে পূণর্বহালে আবেদন জানিয়ে আদালতে রিট করেন। দীর্ঘ দিন ধরে চলমান মামলায় শুণানি শেষে গত ৩১ আগস্ট ২০২২ তারিখে হাইকোর্ট তাকে বরখাস্তের বিষয়টি অবৈধ ঘোষণা করে অবিলম্বে স্বপদে বহালের সিদ্ধান্ত দিয়ে রায় ঘোষণা করে। পরে গত ১৯ অক্টোবর ২০২২ তারিখে আব্দুল হাই আকন্দকে চেয়ারম্যান পদে পূনর্বহালের নির্দেশ দিয়ে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় প্রজ্ঞাপন জারি করে।
সেখানে উল্লেখ করা হয়, যেহেতু আব্দুল হাই আকন্দের বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ বিভাগীয় কমিশনারের তদন্তে সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হয়নি এবং হাইকোর্ট বিভাগ ৩১ আগস্ট ২০২২ তারিখের রায়ে তার বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগটি বেআইনি এবং অকার্যকর বলে ঘোষণা করে রায় প্রদান করে তাই সরকার তাকে জনস্বার্থে উপজেলা চেয়ারম্যান হিসেবে স্বপদে পূনর্বহারে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে।
প্রজ্ঞাপন জারির পর মুক্তাগাছায় আব্দুল হাই আকন্দ সমর্থকদের মাঝে ব্যাপক উৎসাহ দেখা দেয়। তার কর্মী-সমর্থকরা তার নেতৃত্বে সোমবার ব্যানার ফেস্টুন নিয়ে আলোর মিছিল বের করে। মিছিলটি আটানী বাজার থেকে বের হয়ে শহর প্রদক্ষিন করে উপজেলা পরিষদে যায়। সেখানে আব্দুল হাই আকন্দ উপজেলা চেয়ারম্যানের আসনে বসে স্বাভাবিক কার্যক্রম শুরু করেন।
পরে উপজেলা পরিষদ চত্বরে আয়োচিত সংক্ষিপ্ত আলোচনা সভায় উপজেলা চেয়ারম্যান আব্দুল হাই আকন্দ ছাড়াও উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক কমান্ডার আবুল কাশেম, প্রবীন আওয়ামীলীগ নেতা বছির উদ্দিন, উপজেলা পরিষদের সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান দেবাশীষ ঘোষ বাপ্পী, শহর আওয়ামীলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক এবিএম জহিরুল হক জহির, সাবেক ছাত্র নেতা ও আওয়ামীলীগ নেতা মুশফিকুর রহমান মশিউর, মো. তারেক প্রমুখ বক্তব্য রাখেন। পূনর্বহাল হওয়া উপজেলা চেয়ারম্যান আব্দুল হাই আকন্দ বলেন, তিনি স্থানীয় এমপি ও সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী কেএম খালিদ বাবু গংদের চক্রান্তের শিকার হয়েছেন। তিনি বিপুল জনসমর্থন নিয়ে নির্বাচিত হলেও চক্রান্ত করে তাকে জনপ্রতিনিধির দায়িত্ব পালন করতে দেওয়া হচ্ছে না। বঙ্গবন্ধুর আদর্শ ধারণ এবং শেখ হাসিনার নেতৃত্বের প্রতি তার পূর্ণ আস্থা আছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, দলের যেকোন দুর্দিনে তিনি মাঠে থেকেছেন এবং আগামীতেও থাকবেন।
সভায় একাদিক বক্তা বলেন, এখন থেকে অন্যকোন হাইব্রিড বা সুবিধাবাদী নেতা নয় কেবল বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল হাই আকন্দের নেতৃত্বেই মুক্তাগাছায় আওয়ামীলীগের রাজনীতি চলবে।
0 Comments