মুক্তাগাছা প্রতিনিধিঃ
‘দুর্নীতি অনিয়মের বিরুদ্ধে রুখে দাড়াও, বদলে যাও, বদলে দাও’ শ্লোগান নিয়ে দুর্নীতি প্রতিরোধের প্রত্যয়ে সারাদেশ ঘুরে বেড়াচ্ছেন হানিফ বাংলাদেশী (মো. হানিফ) নামের এক যুবক। তিনি দেশের প্রতিটি জেলায় এবং উপজেলায় গিয়ে প্রশানের উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী বরাবরে দুর্নীতি বিরোধী স্মারকলিপি প্রদান করছেন।
সোমবার তিনি সর্বগ্রাসী ঘুষ দুর্নীতি অর্থপাচার এবং নৈতিক অবক্ষয়ের বিরুদ্ধে ৪৫তম জেলা হিসেবে ময়মনসিংহ জেলা প্রশাসক এবং ৩৪০তম উপজেলা হিসেবে মুক্তাগাছা উপজেলা নির্বাহী অফিসারের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী বরাবরে স্মারকলিপি দিয়েছেন।
নোয়াখালী জেলার মাইজদিতে জন্ম নেওয়া মো. হানিফ একটি বেসরকারী প্রতিষ্ঠানে চাকরি করতেন। দুর্নীতি বিরোধী কার্যক্রম করার কারণে তাকে সেই চাকুরি হারাতে হয়েছে।
শৈশব থেকেই সামাজিক নানা অসঙ্গতি তাকে মানসিক পীড়া দিত। একবার এক নারী কোন একটি কাজের জন্য একটি অফিসে ঘুষ দিয়ে কেদে কেদে বলেন, সন্তান জন্ম দিতে যতটা কষ্ট হয়েছে এই অফিসে ছোট একটি কাজ করতে এসে তার চেয়েও বেশি কষ্ট হচ্ছে। সেই নারীর কষ্টের কথা শুনে হানিফের মনে দাগ কাটে। সেই থেকে তিনি সামাজিক নানা অসঙ্গতির পাশাপাশি দুর্নীতি বিরোধী আন্দোলনে একাই মাঠে নামেন। ২০১০ সালের দিকে শুরু করা এ আন্দোলন তিনি অব্যাহত রেখেছেন।
সোমবার বিকালে তার সাথে কথা হয় মুক্তাগাছা প্রেসক্লাবের বসে। তিনি বলেন, স্বাধীনতার ৫১বছর ধরে চলমান দুর্নীতি দুঃশাসনের বিরুদ্ধে বদলে যাও বদলে দাও ¯েøাগান নিয়ে সোমবার দুপুর ২টায় ময়মনসিংহ জেলার মুক্তাগাছা উপজেলা নির্বাহী অফিসারের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী বরাবর স্বারকলিপি দিয়েছেন দন। তিনি ৬৪ জেলা ও ৪৯৫ উপজেলা প্রদক্ষিণ করে, জেলা প্রশাসক এবং উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী বরাবর স্বারকলিপি দিবেন। তিনি গত ৫ই জুন কক্সবাজারের টেকনাফ উপজেলা থেকে শুরু করছেন প্রতিদিন ৩টি উপজেলা প্রদক্ষিণ করে আগামী ২০২৩ সালের জানুয়ারি মাসে পঞ্চগড় জেলার তেঁতুলিয়া উপজেলায় গিয়ে কর্মসূচি সমাপ্ত করবেন বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
কর্মসূচি সম্পর্কে হানিফ বাংলাদেশী বলেন, সমাজ ও রাষ্ট্র ব্যবস্থার সর্বক্ষেত্রে সামাজিক পারিবারিক মানবিক মূল্যবোধের চরম অবক্ষছ চলছে। ভোট গণতন্ত্র আইনের শাসনের উপর পূর্বের সরকারে যারা ছিলেন সে সময়েও নগ্ন হস্তক্ষেপ হয়েছে। ঘুষ দুর্নীতি অর্থ পাচার হয়েছে। সামাজিক মানবিক পারিবারিক মূল্যবোধের অবক্ষছ পূর্বেও ছিল এখন আরো চরম আকার ধারণ করেছে। আমাদের দেশের কৃষক উৎপাদনশীল, শ্রমিকরা পরিশ্রমী, ছাত্র যুবকেরা মেধাবী কিন্তু দুর্বৃত্তায়িত রাজনীতি, দুনীতিগ্রস্ত রাজনীতিবিদ,দুর্নীতিগ্রস্ত সরকারি আমলা, দুর্নীতিগ্রস্ত বড় বড় ব্যবসায়ীরা লক্ষ কোটি টাকা বিদেশ পাচার করে আমাদের সকল অর্জনকে ব্যাহত করছে। এত সম্ভাবনা থাকার পরেও দেশ যতটুকু এগিয়ে যাওয়ার কথা ততটুকু এগিয়ে যাচ্ছে না। দেশে অবকাঠামোগত অনেক উন্নয়ন হচ্ছে কিন্তু মানবিক মূল্যবোধের পতন হচ্ছে। আশা করি সম্ভাবনাময় এই অগ্রযাত্রা এগিয়ে নিতে এবং চলমান উন্নছনের ধারা অব্যাহত রাখতে ঘুষ, দুর্নীতি ও অর্থপাচার বন্ধে কার্যকর ব্যবস্থা ও পাচারকৃত অর্থ ফেরত এনে যুবকদের মাঝে আত্মকর্মসংস্থান সৃষ্টি করতে সহজ শর্তে ঋণ ও কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা, ভোট গণতন্ত্র আইনের শাসনের মান উন্নয়নে আরো যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করলে বাংলাদেশ বিশ্বে একটি আত্মমর্যাশীল দেশ হিসেবে মাথা উঁচু করে দাঁড়াবে।
হানিফ বাংলাদেশী আরো বলেন, তিন দেশের নানা অসঙ্গতি নিয়ে সব সময় প্রতিবাদ করে থাকেন। এর আগেও ঢাকা শহরসহ দেশের জনবহুল স্থানে পাবলিক টয়লেট স্থাপনের আন্দোলন করেছেন। ২০১৩ থেকে ২০১৪ সালে দেশে যখন জ্বালাও—পোড়াও শুরু হয় তখন দুই নেতৃত্ব বরাবর স্মারকলিপি দিয়েছেন।
২০১৯ সালের মার্চ মাসে ভোটাধিকারের দাবিতে টেকনাফ থেকে তেঁতুলিয়া পায়ে হেটে পদযাত্রা করেছেন। নির্বাচন কমিশনকে পঁচা আপেল দিয়ে প্রতিবাদ করেছেন। সংসদ ভবনের চার পাশে ১৬ বার প্রদক্ষিণ করে স্পিকারের বরাবর স্বারকলিপি দিয়েছেন। ২০২০ সালে সর্বগ্রাসী দুর্নীতির বিরুদ্ধে ৬৪ জেলা প্রদক্ষিণ করে জেলা প্রশাসক অফিসে স্মারকলিপি দিয়েছেন। ২০২০ সীমান্ত হত্যা বন্ধের দাবিতে প্রতীকী লাশ নিয়ে পদযাত্রা করেছেন। ২০২১ সালে দেশব্যাপী মার্চ ফর ডেমোক্রেসি গণতন্ত্রের জন্য গণস্বাক্ষর সংগ্রহ করছেন। বেকার যুবকদের কর্মসংস্থানের দাবি সংসদ ভবনের সামনে ঘন্টা বাজিয়ে প্রতিবাদ জানিয়েছেন। ২০২১ সালে নির্বাচন কমিশন গঠনে আইন প্রণয়নের দাবিতে মাথায় ভোটের বাক্স নিয়ে ৬৪ জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে মহামান্য রাষ্ট্রপতি বরাবর স্মারকলিপি দিয়েছেন। এখন ৫০ বছর ধরে চলমান দুর্নীতি-দুঃশাসের বিরুদ্ধে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণের দাবিতে প্রধানমন্ত্রী বরাবর স্বারকলিপি দেওয়ার উদ্যোগ নিয়ে কর্মসূচি শুরু করেছেন। তার এই কর্মসূচিতে দেশবাসী, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও সাংবাদিক ভাইদের সার্বিক সহযোগিতা কামনা করেন তিনি।
0 Comments