বাবলু আকন্দ : স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থী কিংবা কোমলমতি শিশুদের সুস্বাদু খাবার হিসেবে প্রধান পছন্দ বেকারির খাদ্যপণ্য। ক্ষুধা মেটাতে বয়স্ক মানুষদেরও খাবারের তালিকায় থাকে বেকারিতে তৈরি হওয়া মুখরোচক বিভিন্ন পণ্য। আর এটাকেই পুঁজি করে মুক্তাগাছার বিভিন্ন পাড়া-মহল্লায় গড়ে উঠেছে নামে-বেনামে অনুমোদনহীন বেকারি। যেখানে অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে তৈরি হচ্ছে খাদ্যপণ্য। নিয়ম-নীতির তোয়াক্কা না করেই বছরের পর বছর বানিয়ে চলছে বিস্কুট, কেক, মিষ্টি, চিনি দিয়ে তালমিশ্রিসহ নানা খাবার। তবে এসব পুরাতন খবর। আঁৎকে উঠারমত ঘটনা হলো যেখানে তিনমাস আগেও পোল্ট্রি মুরগীর খামার ছিলো, সেই মুরগীর সেটেই ভাই-বন্ধু নামে এক বেকারী গড়ে তুলেছেন প্রভাবশালী এক ব্যক্তি। তিনি এই বেকারিতে অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে তৈরি করা বিভিন্ন পণ্য বাজারজাত করে আসছে। সেখানে এখনও মুরগির ফার্মের বিষ্টার দুর্ঘন্তে টিকা দুস্কর অথচ চলতে খাদ্যপন্য তৈরীর কাজ। বিএসটিই, পরিবেশ অধিদপ্তর, পৌরসভা বা অন্যকোন দপ্তরের সরকারী কোন ধরণের অনুমোদন নাই। তবুও চলছে বেকারী। কোনো প্রকার ভেজালবিরোধী অভিযান না থাকায় ব্যবসা পরিচালনা করতে এসব মালিকদের কোনো অসুবিধায় পড়তে হচ্ছে না বলে স্থানীয়দের অভিযোগ।
সরেজমিনে পৌর শহরের ঈশ্বরগ্রাম বটতলা এলাকার ভাই-বন্ধু বেকারিতে গিয়ে দেখা যায়, কয়েকদিন আগেও যেখানে পল্ট্রি ফার্ম ছিলো সেই পোল্ট্রি ফার্মের সেট ঘরের স্যাঁতস্যাঁতে নোংরা পরিবেশে ভেজাল ও নিম্নমানের উপকরণ দিয়ে অবাধে তৈরী হচ্ছে বেকারি নানা ধরনের খাবার। মুরগীর খাদ্যের পাত্রগুলো এখনো একপাশে স্তুপ করে রাখা আছে। ভেতরে নোংরা পরিবেশের দুর্গন্ধের ছড়াছড়ি। কর্মচারিদের হাত-পায়ে লেগে আছে ময়লা। কারিগরদের গাঁয়ের ঘাম ঝরে পড়ছে খাদ্যদ্রব্যে, মেঝেসহ খাদ্যপণ্যের সঙ্গে পড়ে রয়েছে বিড়ি সিগারেটের অবশিষ্টাংশ। বিভিন্ন খাদ্য তৈরির সরঞ্জামে কীটপতঙ্গ থাকতেও দেখা গেছে। নোংরা ও অপরিষ্কার কড়াইতে আটা ময়দা প্রক্রিয়াজাত করা হচ্ছে। ডালডা দিয়ে তৈরী করা ক্রিমের পাত্রগুলোতে ঝাঁকে ঝাঁকে মাছি ভন ভন করছে। এ ছাড়া কারখানায় পাওয়া গেছে মানবদেহের জন্য চরম ক্ষতিকর বিষাক্ত কেমিক্যাল, ক্ষতিকারক রং, পচা ডিম। অভিযোগ রয়েছে খাবার তৈরীতে ক্ষতিকারক রাসায়নিক পদার্থ ও নিম্নমানের পাম তেল ব্যবহার করা হচ্ছে। শ্রমিকরা বিশেষ পোশাক ছাড়া খালি পায়ে খাবার তৈরী করছেন। উৎপাদিত খাদ্যের মান প্রণয়ন এবং গুণগতমান ও পরিমাপ নিশ্চিতকরণ কোনো ব্যবস্থাও নেই। উৎপাদন ও মেয়াদোত্তীর্ণ তারিখ ছাড়াই বাহারি মোড়কে বনরুটি, পাউরুটি, ড্রাইকেক, বিস্কুটসহ বিভিন্ন ধরনের বেকারি ফাস্টফুড খাবার উৎপাদন ও বাজারজাত করা হচ্ছে। এতে হুমকির মুখে পড়ছে জনস্বাস্থ্য।
গণমাধ্যম কর্মীদের উপস্থিতি দেখে প্রথমে বেকারীর ম্যানেজারসহ সবাই চমকে উঠেন। পরে একে একে কথা হয় সবার সাথে। কথা বলার এক পর্যায়ে ম্যানেজ্যার কামাল মিয়া পোল্ট্রি ফার্মের কথা শিকার করে বলেন তারা নতুন ব্যবসা শুরু করেছেন। তাদের কোন কাগজ নেই, এমনকি ট্রেড লাইসেন্স টাও তাদের নেই। নোংরা পরিবেশের কথা জিজ্ঞেস করলে তিনি জানান, অনান্য বেকারির তুলনায় আমাদের বেকারির পরিবেশ অনেক সুন্দর।
ভাই-বন্ধু বেকারীর মালিক খোকন পাঠান বলেন, অল্প কয়েক মাস হলো এখানে ব্যবসা শুরু করেছি। আগে এখানে পোল্ট্রি ফার্ম ছিলো, আমরা পরিষ্কার করে এখানে বেকারী চালু করেছি। এখনও কোন কাগজ করা হয়নি। মুক্তাগাছার কোন বেকারীরই সঠিক কাগজ-পত্র নেই। সবাই যে যার মত ব্যবসা করছে।
মুক্তাগাছা পৌরসভার ৮নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর মো. আব্দুল হানিফ মির্জা বলেন, চরম অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে, কোন ধরণের অনুমোদন ছাড়াই একটি মুরগির ফার্মের ভেতরে কি করে এমন একটি বেকারি চলতে পারে বোধগম্য হয় না। এটা জনস্বাস্থের জন্য হুমকি। পৌরসভার ট্রেড লাইসেন্স বা অন্যকোন ধরনের কাগজপত্র নেই উল্লেখ করে তিনি দ্রæত তদন্তপূর্বক প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের প্রতি দাবী জানান।
উপজেলা স্যানেটারি ইন্সপেক্টর আব্দুল হাই জানান, আমি গতকাল জেনেছি পোল্ট্রি ফার্মে ভাই-বন্ধু নামে একটি বেকারী ব্যবসা পরিচালিত হচ্ছে। আমি যাবো সেখানে সরেজমিনে দেখে আমার উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানাবো। তাছাড়া সকল বেকারি মালিকদের পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নভাবে ভেজালমুক্ত খাদ্যদ্রব্য প্রস্তুত করতে একাধিকবার বলা হয়েছে। কিন্তু তারা কিছুই মানতে চায় না। বিধিমতো ব্যবস্থা নেয়া হবে বলেও তিনি জানান।
0 Comments