বাবলু আকন্দঃপাঠক নন্দিত স্থানীয় সংবাদপত্র দৈনিক ব্রহ্মপুত্র এক্সপ্রেস একদশকে পদার্পণ করেছে। দশকপূর্তির এই দিনে ব্রহ্মপুত্র এক্সপ্রেসের শ্লোগান ছিলো ‘পথের খোঁজে বহুপথ, সত্যে থাকার হোক শপথ’ ও ‘সত্য সুন্দর ন্যায়ের পক্ষে’। দৈনিক ব্রহ্মপুত্র এক্সপ্রেসের এক দশকে পদার্পন উপলক্ষে বর্ণিল আয়োজন করা হয় ময়মনসিংহ নগরের শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিন উদ্যানের বৈশাখী মঞ্চের বিপরীত দিকে।
রোববার বিকেল ৪ টায় অনুষ্ঠানের সময় নির্ধারিত থাকলেও অনুষ্ঠানস্থলে গণমাধ্যমকর্মীরা আগে ভাগেই হাজির হতে শুরু করেন। স্থানীয় সংবাদপত্রের নান্দনিক আয়োজন দেখতে জড়ো হন নানা শ্রেণি পেশার মানুষ। দৈনিক ব্রহ্মপুত্র এক্সপ্রেসকে নিয়ে শুভেচ্ছা কথন, কেককাটা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে উদযাপন করা হয় দশকে পদার্পনের দিনটি।
অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন ব্রহ্মপুত্র এক্সপ্রেসের সম্পাদক আবু সালেহ মো. মূসা। সমাপনী বক্তব্য রাখেন প্রধান সম্পাদক মো. মুনসুর আলম চন্দন। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন ময়মনসিংহ প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক অমিত রায় ও ব্রহ্মপুত্র এক্সপ্রেসের উপ সম্পাদক মাহমুদুল হাসান মিলন।
স্বাগত বক্তব্যে ব্রহ্মপুত্র এক্সপ্রেসের সম্পাদক আবু সালেহ মো. মূসা বলেন, ২০১৫ সালের আজকের দিনে আমাদের যাত্রা শুরু হয়েছিল, আজ একদশক পূর্ণ করলো। আমার স্বপ্ন ছিলো ময়মনসিংহ থেকে একটি সংবাদপত্র প্রকাশ করবো, যা স্থানীয় দৈনিক হিসেবে মানুষের আস্থার জায়গা দখল করবে। আমরাই বৃহত্তর ময়মনসিংহের একমাত্র রঙিন পত্রিকা বের করছি। মানুষ যেন অনলাইনেও পড়তে পারে সে জন্য আমাদের রয়েছে ই-পেপার, অনলাইন ভার্সন ও মাল্টিমিডিয়া। আমরা চেষ্টা করছি পাঠকের কথা তুলে ধরে প্রকৃত গণমাধ্যম হয়ে উঠার জন্য।
অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি ময়মনসিংহ রেঞ্জের ডিআইজি ড. মো. আশরাফুর রহমান বলেন, ব্রহ্মপুত্র পাড়ে দাঁড়িয়ে ব্রহ্মপুত্র এক্সপ্রেসের একদশক পূর্তির এই দিনে সমাজের সকল স্তরের মানুষের প্রতি কৃতজ্ঞতা। আমরা চাইবো এই পত্রিকাগুলো তাদের ন্যায়নিষ্ঠতা নিয়ে প্রকাশিত হবে। দৈনিক ব্রহ্মপুত্র এক্সপ্রেস সঠিক তথ্য উপাত্তের মাধ্যমেই প্রকাশিত হচ্ছে বলেই বেঁচে থাকবে পাঠকের হৃদয়ে। ব্রহ্মপুত্র এক্সপ্রেসের প্রতি শুভকামনা থাকলো।
বিএনপির ময়মনসিংহ বিভাগীয় সহসাংগঠনিক সম্পাদক আবু ওয়াহাব আকন্দ বলেন, ব্রহ্মপুত্র এক্সপ্রেসের নেপথ্যের কারিগরেরা সাহসের সঙ্গে কাজ করে যাচ্ছে। দেশের ক্লান্তিলগ্নে অনেকে বলে পারি না, সাংবাদিকের কলম যদি স্বাধীনভাবে কাজ করতে না পারে তাহলে একটি জাতি ১৭ বছর যেমন পিছিয়ে ছিল তেমনি পিছিয়ে থাকবে।
ময়মনসিংহ দক্ষিণ জেলা বিএনপির সদস্য সচিব রোকনুজ্জামান সরকার বলেন, সবসময়ই সাংবাদিকদের সঙ্গে আমার একটি ভালবাসার সম্পর্ক আছে। সাংবাদিক ভাইদের মনে করি আমার সামনে একটি আয়না। আমি সারাদিন কি ভুল করলাম, দিন শেষে আমি সেটি সেই আয়নার মাধ্যমেই জানতে চাই, সাংবাদিকদের মাধ্যমেই শুনতে চাই। আমি মনেকরি সাংবাদিকতা এমন একটি পেশা হওয়া উচিত যে, আপনারা কারও পক্ষে না, আপনারা সমাজের বিবেক, আয়না। আমরা ভুল করলে আপনারা সেটি ধরিয়ে দিবেন, গঠনমূলক সমালোচনা করবেন। কিন্তু এমন করবেন না যে কোন ভদ্রলোককে আপনারা তার পেশায়, তার ব্যবসায় এমন কিছু লিখবে না যার মাধ্যমে সে সমাজে খাটো হয়, হেয়প্রতিপন্ন হয়। তাহলে সেটা হলুদ সাংবাদিকতা হয়ে যাবে। তবে ব্রহ্মপুত্র এক্সপ্রেস সেটি কখনও করে না। ব্রহ্মপুত্র এক্সপ্রেস সব সময় বস্তুনিষ্ঠ সাংবাদিকতা করে। আমি দৈনিক ব্রহ্মপুত্র এক্সপ্রেসে উত্তর উত্তর সাফল্য কামনা করি।
মহানগর যুবদলের সাধারণ সম্পাদক জোবায়েদ হোসেন শাকিল বলেন, দশ বছর আগে যেদিন এই বিভাগ প্রতিষ্ঠা হয়েছিল সে সময় ব্রহ্মপুত্র এক্সপ্রেস যাত্রা শুরু করে। প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে যারা এখন পর্যন্ত জড়িত আছেন তারা বস্তুনিষ্ঠ সংবাদ প্রকাশে এগিয়ে যাচ্ছে। এ ব্রহ্মপুত্র এক্সপ্রেস শতবছর, হাজার বছর টিকে থাকুক।
বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী ময়মনসিংহ শাখার এসিস্ট্যান্ড সেক্রেটারী মাহবুবুর রশিদ ফরাজী নিজের বক্তব্যে বলেন, ব্রহ্মপুত্র এক্সপ্রেসের দশম বর্ষপূর্তিতে সকল কলাকুশলিদের ধন্যবাদ জানাচ্ছি ও সাফল্য কামানা করছি। যারা পতিত স্বৈরাচারের বিদায় করার জন্য ভূমিকা রেখেছেন তাদের মধ্যে পত্রিকা-মিডিয়া গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে। ব্রহ্মপুত্র এক্সপ্রেস ভালো ভূমিকা রেখেছে। ভবিষ্যতে ২০২৪ সালের স্বাধীনতাকে অর্থবহ ও যৌক্তিক করার জন্য ভূমিকা রাখবে ব্রহ্মপুত্র এক্সপ্রেসসহ অন্যরা, এটিই প্রত্যাশা।
জাতীয়তাবাদী স্বেচ্ছাসেবক দলের কেন্দ্রীয় সহ সভাপতি এমজি মাসুম রাসেল বলেন, ব্রহ্মপুত্র পাড়ে অনেক স্মৃতি। ব্রহ্মপুত্র এক্সপ্রেসের এক দশকে ব্রহ্মপুত্র পাড়ের এই আয়োজন থেকে বস্তনিষ্ঠ সাংবাদিকতা আপনারা করে যাবেন সেই প্রত্যাশা করি।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ময়মনসিংহের সমন্বয়ক গোকূল সূত্রধর মানিক বলেন, ব্রহ্মপুত্র এক্সপ্রেসকে ধন্যবাদ জানাই, যারা আমাদের জুলাই অভ্যুত্থানকে ন্যায়নিষ্ঠ সাংবাদিকতার ক্ষেত্রে বলিষ্ঠ ভূমিকা পালন করছে। ধন্যবাদ জানাই সে সকল সাংবাদিকদের যারা জীবন বাজি রেখে জুলাই অভ্যূত্থানের সংবাদ সংগ্রহ করেছেন। রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দকেও ধন্যবাদ জানাই, কারণ তাদের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ সহযোগিতা ছাড়া ফ্যাসিস্ট হাসিনাকে বিদায় করা যেতো না।
অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) শিহাব উদ্দিন আহমদ বলেন, ব্রহ্মপুত্র এক্সপ্রেস দশক পূর্ণ করায় অভিনন্দন। স্থানীয়ভাবে প্রকাশিত পত্রিকাগুলোর টিকে থাকা অনেক কঠিন। যেহেতু পত্রিকাটি একদশকে পদার্পন করেছে তাহলে বুঝতে হবে পত্রিকাটি গুণগত মান রক্ষা করে চলেছে। সংবাদপত্র আমাদের সমাজে গণতন্ত্রকে প্রতিষ্ঠিত করে।
ময়মনসিংহ প্রেসক্লাবের সাবেক সহ সভাপতি এ জেডএম ইমাম উদ্দিন মুক্তা বলেন, ব্রহ্মপুত্র এক্সপ্রেসের এক দশকে পদার্পন স্থানীয় সংবাদপত্রের জন্য এটি অনেক বড় অর্জন। আমরা চাই নির্ভিক সাংবাদিকতা। সে জন্য চাই পরিবেশ। যেটি সাদা সেটি সাদাই, যেটি কালো সেটিকে কালো বলতে চাই। এই জাতির অনেক প্রত্যাশা গণমাধ্যমের প্রতি।
ময়মনসিংহ প্রেসক্লাবের সহসভাপতি মোশাররফ হোসেন বলেন, আমরা এখন স্বাধীন, যা ইচ্ছা তা লিখতে পারছি, গত ১৫ বছর তা করতে পারিনি। তবে আমরা ভারতের মতো স্বাধীন নই, যে মিথ্যা সংবাদ পরিবেশন করে দাঙ্গা সৃষ্টি করবো। ব্রহ্মপুত্র এক্সপ্রেসের অগ্রযাত্রা অব্যাহত থাকুক।
আরও বক্তব্য রাখেন, সাংবাদিক ইউনিয়ন ময়মনসিংহের সভাপতি এম আইয়ুব আলী, সাংবাদিক নেতা মীর গোলাম মোস্তফা, ব্যবসায়ী মোজাম্মেল হোসেন প্রমুখ।
দৈনিক ব্রহ্মপুত্র এক্সপ্রেসের প্রধান সম্পাদক মো. মুনসুর আলম চন্দন বলেন, পাঠকের ভালোবাসা আমাদেরকে আরও দায়িত্বশীল হয়ে কাজ করতে প্রেরণা যুগায়। পাঠকের জন্য ব্রহ্মপুত্র এক্সপ্রেস বিগত সময় যেভাবে কাজ করে গেছে, আগামীতেও বৈষম্যহীন বাংলাদেশ বিনির্মাণে মানুষের কণ্ঠ হয়ে কাজ করে যাবে।
শুভেচ্ছা কথন শেষে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান পর্বে গান পরিবেশন করেন কণ্ঠরাজ অপু, মিজান বাউলা, মিতু ও জ্যোতিসহ এক ঝাক শিল্পী।
0 Comments